জীবনযুদ্ধে সব হারিয়েও হার মানেননি জসিম

গত ২৫ বছর আগে দুপুর বেলা হঠাৎই এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় জীবন বদলে যায় জসিমের। বিদ্যুতের খুঁটিতে কাজ করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে কোমরের হাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। চিরতরে বদলে যায় তার জীবন। শুধু চলার শক্তিই নয়, হারিয়েছেন পুরুষত্বের অহংকারটুকুও। প্রতিদিন সকালে ক্র্যাচে ভর করে হেটে চলেন। পথে সেই পিলারের সামনে এসে কিছুক্ষণ থেমে থাকলেও জীবন চলায় হার মানেননি। বছরের পর বছর হাসপাতাল ও বিছানায় শুয়েও কখনো মনোবল হরাননি। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে জীবনে দ্বিতীয় বার হাঁটতে শিখেছেন। হাত ও মাথা কাজে লাগিয়ে পুরনো পেশায় ফিরেছেন। তবে এখন আর বৈদ্যুতিক পিলারে নয় ক্র্যাচে ভর করে সরকারি বেসরকারি ভবন ও বাসা বাড়িতে ইলেকট্রনিক্স কাজ রেখে পরে সহযোগীদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেন। জসিম উদ্দীন জানান, প্রথম দিকে সামান্য আয় হলেও এখন ভালোই আয় তার। মাস শেষে এখন গড়ে প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা রোজগার করেন তিনি। এই টাকায় নিজের চিকিৎসা, ভাইবোনদের পড়াশোনা, বিয়ে, ব্যবসা ও চাকুরির ব্যবস্থা করেছেন। সংসারে সবকিছুতে হাল ধরেছেন। নেত্রকোনা সদর উপজেলার হোসেনপুর এলাকার মৃত তসলিম উদ্দিনের চার ছেলের মাঝে দ্বিতীয় জসিম। তিনি জানান, নিজের সংসার না হলেও ছোট ভাইবোন ও মাকে ভালো রাখতে পারায় সন্তুষ্ট তিনি। শুধু নিজের জীবন ও পরিবারে থেমে থাকেননি, এলাকায় যুব সমাজকে মাদক আর জুয়া থেকে দূরে রাখতে ও প্রতিবন্ধী মানুষের সেবায় করেছেন সংগঠন। তরুণদের জন্য করেন খেলাধুলার আয়োজন। নিজের সীমাবদ্ধতা ভুলে, অন্যদের এগিয়ে নিতেই কাজ করছেন জসিম। স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুর রহমান জানান, জসিম উদ্দীন ভাই ফ্যান, টিভি, মোটর, মোবাইল ফোনসহ যে কোনো ইলেকট্রনিক্সের সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। ইলেকট্রনিক্স মেরামত কাজে অদ্ভুত দক্ষতা অর্জনে স্থানীয়ভাবে একজন বিশ্বস্ত কারিগর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। এ দিকে বিয়ে না করলেও জীবনে কখনো একাকীত্ব অনুভব করেন না জসিম। তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দুই এখন বৃদ্ধা মা ছোট ভাইয়েরা। বাড়িতে থাকাকালীন সার্বক্ষণিক মায়ের পাশেই বসে থাকেন জসিম। মায়ের মুখের হাসি দেখাই যেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এক সময় পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকলেও বর্তমানে জসিমের আয়ে ভালোই আছেন পরিবারের সবাই জানান বৃদ্ধা মা ও ভাই বোন স্বজনরা। জসিম উদ্দীন স্থানীয় মানুষ ও পরিবারের কাছে সাহস, সংগ্রাম আর মানবতার প্রতীক। প্রমাণ করেছেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই জয়ের পথে বাধা হতে পারে না। তার জীবন যাপন অসংখ্য মানুষকেই অনুপ্রেরণা যোগায়, দেখায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন।

Comments