দেশসেরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বসুন্ধরা শুভসংঘ দিনে দিনে স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীদের প্রত্যয়, আশা ও সাহসের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সৌন্দর্যে উদ্বেল মানবিক ভোর হয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ ধরা দেয় দরিদ্র পরিবার থেকে আসা হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে। এক নতুন জীবনের আহ্বান হয়ে তাদের কাছে পৌঁছে যায়। আর্থিক অসচ্ছলতা অনেক আলোকবর্তিকার মতো কাজ করছে এই শিক্ষাবৃত্তিমেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে।
সেখানে বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আলোকবর্তিকার মতো কাজ করছে। এটি কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, বরং একটি সুস্থ ও শিক্ষিত সমাজ গঠনের দীর্ঘমেয়াদি প্রয়াস। সারা দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর এমন উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন সহজ করতে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
তাঁদের শিক্ষার পথকে মসৃণ করতে প্রতি মাসে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে পড়ালেখার খরচ। এই সহায়তা পেয়ে শিক্ষার্থীরাও আনন্দিত ও গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। বৃত্তি পাওয়া সেসব শিক্ষার্থীদের কয়েকজন তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মায়া আক্তার জানান, বসুন্ধরা শুভসংঘ স্বপ্নপূরণের এক নতুন দিশা। ‘শুভ কাজে সবার পাশে’—এটি শুধু একটি স্লোগানই নয়, বরং একটি বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গা।
এর বাস্তব উদাহরণই বোধ হয় আমি। আমাদের সবার জীবনেই অনেক প্রতিকূলতা থাকে। সেই প্রতিকূলতাকে জয় করেই জীবন নামের খরস্রোতা নদীটি পাড়ি দিতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জীবনের এই পর্যায়ে আসতে অনেক প্রতিকূলতা পার করতে হয়েছে, যদিও আমার জীবনে সফলতার পাল্লাটা সামান্যই ভারী।
কিন্তু সামনে আরো অনেকটা পথ বাকি আছে, যা অতিক্রম করতে দানবের বেশে শত প্রতিকূলতা এসে না যেন পথ আঁকড়ে দাঁড়ায়। এসব সীমাহীন ভাবনায় যখন আমি নিমজ্জিত, তখনই বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার ভগ্নপ্রায় স্বপ্নগুলো দৃঢ় করে। আমার স্বপ্নপূরণের সারথি হয়ে উৎসাহ প্রদান করে। আমার মৃতপ্রায় ইচ্ছাগুলোতে প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। এরপর যখন মাকে আঁকড়ে ধরে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই মাকেও হারিয়ে ফেলি। ভাগ্য যেন আমাকে দ্বিতীয়বার ভেংচি কাটল। আমরা যেহেতু দুই ভাই-বোন, স্বাভাবিকভাবেই বড় ভাইকে কাঁধ থেকে বইয়ের ব্যাগ সরিয়ে তুলে নিতে হলো সংসারের দায়িত্ব, আমাকে বড় করে তোলার দায়িত্ব। ভালো স্টুডেন্ট হয়েও ভাইয়াকে পড়ালেখা বাদ দিতে হলো। টানাটানির সংসারে ভাইয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম আর ত্যাগের কারণে আজ আমি ভার্সিটি পর্যন্ত আসতে পেরেছি। এখানকার খরচ ভাইয়ের পক্ষে আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। মাথায় তাঁর অনেক ঋণের বোঝা। কিভাবে পড়ার খরচ জোগাড় করব? আশপাশে টিউশনি না পাওয়ায় একরকম বাধ্য হয়ে অনেক দূরে টিউশনি নিলাম। রাতে যাতায়াতের অসুবিধা, টিউশনিও প্রায় যায় যায় অবস্থা। দিনে দিনে যখন সব স্বপ্নকে চোখের সামনে ভেঙে যেতে দেখছি, লক্ষ্যপূরণের পথটিকে যখন হারিয়ে ফেলছি, তখনই সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমার সমস্যা নিরূপণ করতে পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেতে শুরু করলাম, মাথা থেকে অনেক চিন্তাই কমে লাগল। এখন আর মাসের শুরুতেই মাসের শেষের দিকের যোগ-বিয়োগের হিসাব কষতে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, আমি যেন লক্ষ্যপূরণের রাস্তায় ফিরে এসেছি। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। সর্বদা বসুন্ধরা শুভসংঘকে নিজের পরিবার ভেবে যাব।
Comments
Post a Comment