মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তিন আসামি খালাস পাওয়ায় রায়ে সন্তুষ্ট নন শিশুটির মা। আজ শনিবার সকালে রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামিদের পাশাপাশি মামলার বাদী শিশুটির মা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এই নারী বলেন, ‘আমি খুশি না। এই মামলায় তিন আসামি খালাস পাইল? ওরা তো এ কাজে সহযোগিতা করিছে। আমার বড় মেয়েরে হুমকি দেছে। তারে মারধোর করছে, মুখ আটকায় রাখছে। ওরাও দোষী, ওদেরও শাস্তি হওয়া উচিত।’ ওই তিনজন যদি সেই একইকাজ অন্যদের সঙ্গে করে তখন কী হবে, প্রশ্ন রাখেন মৃত আছিয়ার মা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের কারণে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের প্রতিক্রিয়া
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘মূল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে বাকি তিনজন খালাস পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমাদের পূর্ণাঙ্গ রায় দেখতে হবে। তারপর পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী (লিগ্যাল এইড থেকে নিযুক্ত) সোহেল আহম্মেদ বলেন, ‘তিন আসামি খালাস পাওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তবে হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, তা তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মেয়ের অভিযোগ- ‘এটা একপেশে বিচার হয়েছে। আমাদের পক্ষে কেউ দাঁড়াতে চায়নি। লিগ্যাল এইড থেকে যিনি আইনজীবী পেয়েছিলাম, তিনি আমাদের কথা সঠিকভাবে আদালতে উপস্থাপন করেননি। আমরা সাক্ষী দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আইনজীবী তা মেনে নেয়নি। আজ যদি আমার বাবার ফাঁসির মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, হোক। কিন্তু আমাদের পক্ষেও যে অন্যায় হয়েছে, তার বিচার কে করবে?’
তিনি জানান, ঘটনার পর তাদের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং তার দাদি এখন অন্যের বারান্দায় রাত কাটান।
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ শিশুটি বেড়াতে গিয়েছিল বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেদিনই ফরিদপুর হয়ে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয় এবং ৭ মার্চ শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ ঢাকার সামরিক হাসপাতালে সে মারা যায়।
মরদেহ সামরিক হেলিকপ্টারে মাগুরায় এনে জানাজার পর শ্রীপুর উপজেলার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে শিশুটির মা ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন।
এই মামলার রায় ঘোষণা হলো মাত্র ৭৩ দিনের মাথায়। পুলিশ ৩৭ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করে এবং মাত্র ১৩ কার্যদিবসে বিচার শেষে রায় ঘোষণা করে আদালত, যা দেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি নজিরবিহীন দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Comments
Post a Comment