বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আদালত এখন আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে গেছে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমি সকালে ৯টায় আদালতে যাই। শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল সাড়ে ১২টায়। পরে জানা গেল, সাক্ষী আসেননি। তাই আমি এখানে চলে এসেছি। আদালতে যাওয়া এখন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আগে যেতে হয়েছে, এখনো যেতে হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র অভিযোগ করেন, বর্তমানে যিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন, তার বিরুদ্ধেও একই ধরনের মামলা ছিল। তিনি সেসব মামলা থেকে অব্যাহতি নিয়েই দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাহলে আমি গয়েশ্বর রায় কেন আদালতে যাই? আমাদের কি কোনো অবদান নেই? আমরা কি মরে গেছি? আমরা তো এখনো বেঁচে আছি। এটা কি আমাদের প্রাপ্য নয়?
গয়েশ্বর বলেন, মানুষ দুর্ভোগে থেকেও বাঁচতে চায়। পৃথিবীতে টিকে থাকার একটা টান আছে, যেমন ক্ষমতার চেয়ারেও একটা টান আছে। একবার বসলে সেটি ছাড়তে ইচ্ছা করে না।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট স্বাভাবিকভাবে পদত্যাগ করতেন এবং সংসদ বিলুপ্ত হতো, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতো না? তাহলে নির্বাচন কমিশন এত সময় নিচ্ছে কেন?
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ৮০ দিনের মাথায় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হয়েছে। তাহলে এখন কেন দুই বছর সময় লাগছে?
সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গয়েশ্বর দাবি করেন, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই। বিএনপির বিরুদ্ধে লেখা সবচেয়ে নিরাপদ। আগে বলা হতো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই বলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখা যায় না। এখন ১৬ বছরের শাসনের কাহিনির চেয়ে বেশি লেখা হয় বিএনপির বিরুদ্ধে। কারণ, এটাই যেন অভ্যাস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সংবাদপত্রের মালিক মানেই সাংবাদিক না। মালিক স্বাধীন হলে সাংবাদিকরাও স্বাধীন হবেন—এই ধারণা ভুল। অনেক মিডিয়ায় অর্থের অভাব নেই, কিন্তু সাংবাদিকদের ঠিকমতো বেতন দেওয়া হয় না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা লেখেন, তাঁরা তুলনামূলকভাবে স্বাধীন বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর।
বাংলাদেশ পেশাজীবী জোট আয়োজিত এ সভা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে চালানো অভিযানের ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে ‘গণহত্যার বিচার, সংলাপ, সংস্কার ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জোটের সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির বেপারী। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজী।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
Comments
Post a Comment